ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ সুসংগঠিত ও সমন্বিত: জাতিসংঘ

jsডেস্ক নিউজ :
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সুসংগঠিত ও সমন্বিতভাবে আক্রমণ করা হয় বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ। সম্প্রতি সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রোহিঙ্গাদের ওপর নিয়মানুগভাবেই নির্যাতন চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ২৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা নারী জাতি সংঘের গবেষণা দলকে জানিয়েছে, ‘বাড়ির পেছনে একটি গাছের আবডালে দাঁড়িয়ে অসহায়ভাবে আমরা শুধুই তাদের নির্যাতনের চিত্র দেখছিলাম। চার জন সেনা সদস্য বাড়ি থেকে আমার ছোট বোনকে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যায়। এ সময় আমরা তাকে বাঁচাতে পারিনি। কারণ তারা আমার বোনকে আমাদের সামনেই ধর্ষণ করেছিল। আমার বোন চিৎকার করে কেঁদেছিল কিন্তু বাবাও তাকে সাহায্য করতে পারেননি।’

এছাড়া ১২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, এক মেয়ে তার ছোট বোনকে সেনা সদস্যদের গুলির আঘাতে মরতে দেখেছে। কিন্তু তাকে কেউ সহায়তা করতে পারেনি।

বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানকালে জাতিসংঘের ওই গবেষণা দলের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তারা এসব কথা বলেন।

জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণের প্রধান কারণ তাদের শুধু মিয়ানমার থেকে তাড়িয়ে দেওয়া নয়, বরং তারা যেন আর কখনও নিজ বাড়িতে ফিরতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখানের বৌদ্ধরাই রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া কমপক্ষে ৬৫ জন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের কর্মকর্তা, স্থানীয় বাংলাদেশি অথরিটি, গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক এনজিও, চিকিৎসক ও এইড সংস্থাগুলোর সহায়তায় এসব সাক্ষাৎকার নিয়েছে সংস্থাটি।

প্রতিবেদেনে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও রাখাইনের বৌদ্ধদের একশ থেকে দেড়শ জনের একেকটি দল রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ চালাতো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা মুসলমানদের খুব কাছ থেকে অথবা পালানোর সময় পেছন থেকে গুলি করতো তারা।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।

তবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই খারাপ বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

রোহিঙ্গা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করার ইচ্ছা পোষণ করেছে। কিন্তু সম্প্রতি কংগ্রেসের এক শুনানিতে জানানো হয়, মিয়ানমারে প্রবেশাধিকারের অভাবে যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে জোরালোভাবে জবাব দিতে পারছে না।

ইউএসএইডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের উত্তরের রাখাইন রাজ্যে প্রবেশ করতে পারছে না। কিন্তু মিয়ানমারের অন্য অঞ্চল থেকে দেশটি কিছু কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের সুশীল সমাজকে সরকারের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে সহায়তা করছে।

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে অতিরিক্ত ৩২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করে। যার মধ্যে ২৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এবং বাকি চার মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে মিয়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের সহায়তায়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি জানান, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ‍যুক্তরাষ্ট্র সব চেষ্টা করছে এবং মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ করতে চাপ দিচ্ছে।

পাঠকের মতামত: